জার্মানিতে অভিবাসী কর্মীরা স্থানীয় জার্মানদের তুলনায় এখনো উল্লেখযোগ্যভাবে কম আয় করেন। নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে, এই আয়বৈষম্য প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসছে এবং এর মূল কারণ হচ্ছে উচ্চ বেতনের চাকরির ক্ষেত্রে অভিবাসীদের জন্য সীমিত সুযোগ।
জার্মানির ন্যুরেমবার্গে অবস্থিত ইনস্টিটিউট ফর এমপ্লয়মেন্ট রিসার্চ (IAB) পরিচালিত গবেষণাটি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী ‘নেচার’-এ প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, জার্মানিতে অভিবাসীদের গড় আয় স্থানীয়দের তুলনায় অন্তত ২০ শতাংশ কম।
তবে গবেষকেরা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, অভিবাসীরা একই ধরনের কাজের জন্য কম বেতন পাচ্ছেন না; বরং তারা সাধারণত উচ্চ বেতনের চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, যার ফলে আয়-বৈষম্য তৈরি হচ্ছে।
বৈষম্যের পরিসংখ্যান
সমীক্ষায় বলা হয়েছে, প্রথম প্রজন্মের অভিবাসীদের ক্ষেত্রে স্থানীয়দের তুলনায় মজুরি-বৈষম্য ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ। গবেষকেরা জানিয়েছেন, এর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ বৈষম্য তৈরি হয়েছে উন্নত মজুরির শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কাজ না পাওয়া, উচ্চ পদে উত্তরণের সুযোগ না থাকা এবং পেশাগত নেটওয়ার্কের অভাবের কারণে।
দ্বিতীয় প্রজন্মের অভিবাসীরাও পুরোপুরি এই বৈষম্য থেকে মুক্ত নয়। তাদের ক্ষেত্রেও মজুরি গড়ে সাড়ে ৭ শতাংশ কম, যা আন্তর্জাতিক গড় (৫.৭ শতাংশ) থেকেও বেশি।
বিশেষ করে আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা অভিবাসীদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, তাদের সন্তানরাও এখনও সুবিধাবঞ্চিত অবস্থায় রয়েছে।
আন্তর্জাতিক তুলনা
গবেষণাটিতে জার্মানির পাশাপাশি আরও আটটি পশ্চিমা দেশের সঙ্গে তুলনা করা হয়:
কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, স্পেন, সুইডেন ও যুক্তরাষ্ট্র।
তুলনামূলকভাবে দেখা যায়—
স্পেন: প্রথম প্রজন্মে আয়-বৈষম্য সবচেয়ে বেশি, ২৯.৩%
কানাডা: ২৭.৫%
নরওয়ে: ২০.৩%
জার্মানি: ১৯.৬%
ফ্রান্স: ১৮.৯%
তবে সুইডেন ও কানাডা এই বৈষম্য কমিয়ে আনতে অনেকটা সফল হয়েছে।
দ্বিতীয় প্রজন্মে কানাডায় বৈষম্য মাত্র ১.৯ শতাংশ, যা বৈষম্য হ্রাসের একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত।
বৈষম্য কমাতে কী করা দরকার?
গবেষণার সহ-লেখক মাল্টে রাইশেল্ট বলেন, “জার্মান সমাজে সফল অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমেই উচ্চ বেতনের চাকরিতে প্রবেশের বাধা দূর করা সম্ভব।”
গবেষকেরা যেসব বিষয়ের দিকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছেন, সেগুলো হলো:
ভাষাগত দক্ষতা বাড়াতে সহায়তা
বিদেশি ডিগ্রির স্বীকৃতি দেওয়া
পেশাদার নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা
তথ্য ভাগাভাগির সুযোগ বৃদ্ধি
সামাজিক অন্তর্ভুক্তির চ্যালেঞ্জ
গবেষণাটি ইঙ্গিত দিচ্ছে, আয়বৈষম্য শুধু অর্থনৈতিক বিষয় নয়, এটি সামাজিক অন্তর্ভুক্তির গভীর সংকেতও বহন করে। দীর্ঘমেয়াদে বৈষম্য দূর করতে হলে অভিবাসীদের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা, কাজের পরিবেশে বৈচিত্র্য আনা এবং নীতি পর্যায়ে সমতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।
প্রতিবেদন: আন্তর্জাতিক ডেস্ক
সম্পাদনা: বার্তা বিভাগ
0 মন্তব্যসমূহ