Header Ads Widget

Responsive Advertisement

গ্রিসে অভিবাসন আইন আরও কঠোর হচ্ছে



বিশ্ব সংবাদ, দক্ষিণ আমেরিকা ডিজিটাল ডেস্ক :  এথেন্স, ২৮ মে:

অনিয়মিত অভিবাসীদের নিয়মিত হওয়ার সুযোগ বাতিলের উদ্যোগ, দ্রুত নির্বাসনের পরিকল্পনা

গ্রিস সরকার অনিয়মিত অভিবাসন রোধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে চলেছে। দীর্ঘদিন ধরে চলমান নিয়ম অনুযায়ী, কেউ যদি টানা সাত বছর অনিয়মিতভাবে গ্রিসে বসবাস করতেন, তাহলে তিনি নিয়মিত হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারতেন। এবার সেই সুযোগ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার। নতুন আইনের খসড়ায় অনিয়মিত অভিবাসীদের জন্য শাস্তি আরও কঠোর করার পাশাপাশি দ্রুত নির্বাসনের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

বুধবার (২৮ মে) মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিতসোটাকিস এ ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, “যারা অবৈধভাবে গ্রিসে প্রবেশ করেছেন বা অবস্থান করছেন, এবং যাদের আশ্রয় আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে, তাদের জন্য শাস্তি আরও কঠোর করা হবে।”

তিনি আরও জানান, এই আইনের লক্ষ্য হবে আশ্রয় প্রক্রিয়া আরও দ্রুত ও ন্যায্যভাবে সম্পন্ন করা এবং অবৈধভাবে অবস্থানরতদের দ্রুত তাদের দেশে ফেরত পাঠানো।


আইনের খসড়া ও মন্ত্রিসভার অনুমোদন

গ্রিসের অভিবাসনমন্ত্রী মাকিস ভোরিদিস জানিয়েছেন, নতুন আইনের খসড়াটি মন্ত্রিসভা ইতোমধ্যে অনুমোদন দিয়েছে। এতে অনিয়মিতভাবে প্রবেশ ও বসবাসের জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

তিনি জানান, জুন মাসে গ্রিক পার্লামেন্টের অধিবেশন শুরু হলে আইনটির খসড়া বিল আকারে পেশ করা হবে। সরকারের পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় বিলটি পাসে বড় কোনো বাধা থাকবে না বলে মনে করা হচ্ছে।


নিয়মিত হওয়ার সুযোগ বাতিলের পক্ষে যুক্তি

২৯ মে (বৃহস্পতিবার) এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে মন্ত্রী ভোরিদিস জানান, সাত বছর বসবাসের শর্তে নিয়মিত হওয়ার নিয়মের অপব্যবহার হচ্ছে। অনেক অভিবাসী ইচ্ছাকৃতভাবে অবৈধভাবে অবস্থান করেন, যাতে পরবর্তীতে এই সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন।

তিনি বলেন, “বর্তমান আইনে যত দিন আপনি অনিয়মিত থাকেন, আপনার জন্য তত বড় পুরস্কার অপেক্ষা করে। এটা অনৈতিক ও বিপজ্জনক।” তিনি আরও জানান, “এখন থেকে কেউ অনিয়মিতভাবে থাকলে তারা কখনও নিয়মিত হওয়ার সুযোগ পাবেন না, এমনকি কোনো ধরনের বৈধতা পাবেন না।”


আটক ও নির্বাসন প্রক্রিয়া আরও কঠোর

২০২৪ সালে গ্রিক পুলিশ ৭৪ হাজার অনিয়মিত অভিবাসীকে আটক করে। তবে তাদের মধ্যে মাত্র ২,৫০০ জনকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়েছে। এর কারণ হিসেবে ভোরিদিস বলেন, অনেক অভিবাসী নিজেদের প্রকৃত পরিচয় গোপন করেন এবং মিথ্যা তথ্য দেন। ফলে নির্বাসন প্রক্রিয়া মাসের পর মাস আটকে থাকে।

নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, যেসব অভিবাসীকে ফেরত পাঠানো হবে, তাদের প্রশাসনিক আটকের মেয়াদ ১৮ মাস থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ২৪ মাস করা হবে। তবে যারা স্বেচ্ছায় দেশে ফিরতে চান, তারা বিশেষ কর্মসূচির মাধ্যমে ফিরে যেতে পারবেন।


নিয়মিত অভিবাসনকে উৎসাহ

সরকার বলছে, অনিয়মিত অভিবাসনের সুযোগ বন্ধ করলেও বৈধ পথে আসা শ্রমিকদের জন্য দরজা খোলা থাকবে। অভিবাসনমন্ত্রী জানিয়েছেন, নতুন নিয়মগুলো জুলাই মাসের মধ্যে কার্যকর হবে।

এদিকে, গ্রিসের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ইয়িয়ানিস স্টোরনারাস জানিয়েছেন, দেশটিতে প্রায় দুই লাখ শ্রমিকের ঘাটতি রয়েছে। তাই অর্থনীতি সচল রাখতে নিয়মিত অভিবাসনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।


অভিবাসন পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপট

তুরস্ক সীমান্ত দিয়ে আগমন কিছুটা কমে আসায় ২০২৫ সালের প্রথম চার মাসে গ্রিসে অভিবাসন প্রবাহ ৩০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে লিবিয়া থেকে নতুন একটি পাচার রুট ব্যবহার করে অনেকেই ক্রিট এবং গাভডোস দ্বীপে পৌঁছাচ্ছেন।

বর্তমানে গ্রিসে হাজার হাজার প্রত্যাখ্যাত আশ্রয়প্রার্থী আটকে আছেন, যাদের ফিরিয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় কমিশন নতুন আইন প্রস্তাব করেছে, যাতে সদস্য দেশগুলো আশ্রয় প্রত্যাখ্যাতদের ইউরোপীয় ইউনিয়ন স্বীকৃত ‘নিরাপদ দেশ’-এও ফেরত পাঠাতে পারে।


পূর্বের অভিজ্ঞতা ও রাজনৈতিক প্রভাব

২০১৫-১৬ সালে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার যুদ্ধ এবং দারিদ্র্য থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ১০ লাখ অভিবাসী ইউরোপে ঢোকার সময় গ্রিস ছিল প্রধান প্রবেশপথ। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই গ্রিস ও ইতালি সহ দক্ষিণ ইউরোপের দেশগুলো সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানায়।

যদিও সাম্প্রতিক সময়ে অনিয়মিত প্রবেশ কিছুটা কমেছে, তবুও অভিবাসন এখনও গ্রিসের রাজনীতিতে এক বিতর্কিত ও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী মিতসোটাকিস এই বিষয়ে কঠোর অবস্থান অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।


প্রতিবেদন: নিজস্ব প্রতিনিধি
সম্পাদনা: ডেস্ক রিপোর্ট

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ