ত্রৈমাসিক সীমান্ত অঞ্চলে (ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও প্যারাগুয়ের সীমান্ত এলাকা) লেবাননের শিয়া সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর আর্থিক কার্যক্রম এবং অপরাধচক্রের ওপর নজরদারি আরও বাড়িয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি তারা ঘোষণা দিয়েছে — হিজবুল্লাহর অর্থনৈতিক নেটওয়ার্ক ভাঙতে তথ্যদাতাদের জন্য সর্বোচ্চ ১ কোটি মার্কিন ডলার (প্রায় ৫৬ কোটি টাকা) পুরস্কার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর জানায়, ত্রৈমাসিক সীমান্তে হিজবুল্লাহর সহায়তাকারী, সদস্য ও অর্থের যোগানদাতারা প্রতি বছর অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ ডলার আয় করছে। এসবের মধ্যে রয়েছে অর্থপাচার, মাদক ও অস্ত্র পাচার, কয়লা, তেল, সিগারেট এবং বিলাসবহুল সামগ্রী চোরাচালান, হীরা ব্যবসা, ডলার ও নথিপত্র জালিয়াতি।
পররাষ্ট্র দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, “এই উদ্যোগ কোনও নতুন ঘটনার প্রেক্ষিতে নেওয়া হয়নি। হিজবুল্লাহর বৈশ্বিক কার্যক্রম ও তাদের অর্থায়ন ব্যবস্থা ভেঙে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য।”
দীর্ঘদিনের নিরাপত্তা উদ্বেগ
কাতারাত দো ইগুয়াসু, সিউদাদ দেল এস্তে এবং পুয়ের্তো ইগুয়াসু এই তিন শহরের সংযোগস্থল ত্রৈমাসিক সীমান্ত অঞ্চল বহুদিন ধরেই চোরাচালান ও অপরাধচক্রের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। এই অঞ্চলে ১৯৮০’র দশকে লেবাননের গৃহযুদ্ধের সময় উদ্বাস্তু হয়ে আসা অভিবাসীদের মধ্য থেকে হিজবুল্লাহ সংগঠনের প্রভাব গড়ে ওঠে।
হিজবুল্লাহ ১৯৯২ সালে আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেসে ইসরায়েল দূতাবাসে এবং ১৯৯৪ সালে ইহুদি কমিউনিটি সেন্টার (AMIA)-এ বোমা হামলার পেছনে জড়িত বলে অভিযুক্ত। ধারণা করা হয়, এই হামলার পরিকল্পনা ও অর্থায়নও ত্রৈমাসিক সীমান্ত থেকেই হয়েছে।
ব্রাজিলে হিজবুল্লাহ কার্যক্রমের প্রমাণ
ব্রাজিলের ফেডারেল পুলিশের একাধিক তদন্তে হিজবুল্লাহ সদস্যদের আর্থিক কার্যক্রম ও অপরাধচক্রের সঙ্গে সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ২০১৮ সালে ফোজ দো ইগুয়াসু শহরে ‘হিজবুল্লাহর কোষাধ্যক্ষ’ নামে পরিচিত এক লেবানীয় নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়, যিনি মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সন্ত্রাস অর্থায়ন তালিকাভুক্ত ছিলেন। পরে তাকে প্যারাগুয়েতে প্রত্যর্পণ করা হয়।
এছাড়া ২০০৬ সালে এক লেবানীয় বংশোদ্ভূত ব্রাজিলীয় নাগরিক হিজবুল্লাহর সমন্বয়কারী হিসেবে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসেন।
মাদকচক্রের সঙ্গে যোগাযোগ
ফেডারেল পুলিশের অনুসন্ধানে উঠে আসে, হিজবুল্লাহ এবং ব্রাজিলের অন্যতম বৃহৎ অপরাধচক্র ‘প্রথম কমান্ড দা ক্যাপিটাল’ (PCC)-এর মধ্যে মাদক পাচারসহ অবৈধ কার্যক্রমে জোট গড়ে উঠেছে। এই সম্পর্ককে কেন্দ্র করেই সংগঠনটি লাতিন আমেরিকাজুড়ে অর্থ সংগ্রহ ও অস্ত্রচক্র চালাচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী অর্থনীতি ও অবৈধ আয়ের নেটওয়ার্ক
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের তথ্য মতে, হিজবুল্লাহ প্রতিবছর ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি অর্থ আয় করে। যার উৎস ইরানের আর্থিক সহায়তা, বৈশ্বিক বিনিয়োগ, দাতাদের অনুদান এবং মাদক ও অস্ত্র পাচার।
পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তা বলেন, “এই পুরস্কার হিজবুল্লাহর অর্থনৈতিক এবং অপরাধ নেটওয়ার্ক ভেঙে দেওয়ার মার্কিন সরকারের কৌশলের অংশ।”
0 মন্তব্যসমূহ